বিশ্বে খাদ্যপণ্যের দাম সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের মধ্যে

বিশ্বে খাদ্যপণ্যের দাম সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের মধ্যে

করোনাকালে সারাবিশ্বে খাদ্যশষ্যের দাম বেশ বেড়েছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে খাদ্যশষ্যের দাম ছিল গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। বিশ্ব পরিস্থিতির মধ্যে বাদ যায়নি বাংলাদেশও। গত বছরের ৮ মার্চ বাংলাদেশে করোনা হানা দেয়। এরপর থেকে অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে খাদ্যশষ্যের দামও বাড়তে থাকে।

দর বৃদ্ধির এই হার কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত। জাতিসংঘের ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচারাল অর্গানাইজেশন (ফাও) বিশ্বব্যাপী খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ে যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে তাতে খাদ্যশষ্যের দাম নিকট ভবিষ্যতে আরো বাড়তে পারে।

ফাওয়ের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, করোনা মহামারি শুরু হবার পর থেকে বিশ্বব্যাপী খাদ্যের দাম বাড়তে থাকে। চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, গম, বার্লি, বিভিন্ন ডেইরি পণ্য, মাছ, মাংস সবকিছুর দাম বেড়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পণ্যগুলোর উত্পাদন কমে যাওয়া আবার কোনো ক্ষেত্রে দেশগুলোর অতিরিক্ত মজুতদারি বাড়ানোর কারণে দাম বেড়েছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের রিপোর্টে দেখা যায়, এক মাসের ব্যবধানে বিশ্ববাজারে মাংসের দাম ৩ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশের খামারগুলোতে এভিয়ান ফ্লু সংক্রমিত হবার ফলে দাম বেড়েছে।

বিশ্ববাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত না হলেও গত এক বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশে নিত্যপণ্যের দাম ব্যাপক বেড়েছে। সরকারের ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর হিসাব অনুযায়ী, গত এক বছরে মোটা চালের দাম বেড়েছে ৩৭ দশমিক ১৪ শতাংশ। পাইজাম চালের দাম বেড়েছে ২২ শতাংশের বেশি। এসময় সবচেয়ে বেশি বেড়েছে পামওয়েলের দাম। এক বছরের ব্যবধানে এ পণ্যের দাম বৃদ্ধির হার প্রায় সাড়ে ৩৯ শতাংশ। ফাও বলেছে, আবহাওয়ার কারণে ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোতে পামের উত্পাদন কম হওয়ার কারণে দাম বেড়েছে। আবার চীনা ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত পাম ওয়েল মজুদ করার কারণে বাজারে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এদিকে শুধু পামওয়েল নয়, বিশ্ববাজারের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশেও সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে।

বাংলাদেশে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১১৬ থেকে ১২১ টাকায়। এছাড়া বাংলাদেশে এক বছরের ব্যবধানে আটার দাম বেড়েছে ১০ দশমিক ৭১ শতাংশ, ময়দার দাম বেড়েছে সাড়ে ৭ শতাংশ। মসুরডালের দাম এক বছরে ৯ শতাংশ বেড়েছে বলে টিসিবি জানিয়েছে। মাংসের মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। গত এক বছরে এটি বাড়ার হার ২৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ।

ফাও বাংলাদেশের নিত্যপণ্যের ওপর একটি সিচুয়েশন রিপোর্ট দিয়েছে। করোনাকালে নিত্যপণ্যের দাম কেন বাড়বে সে বিষয়ে এতে বিস্তারিত বলা হয়েছে। ফাও বাংলাদেশ অফিস বলছে, করোনা শুরু হবার পর বাংলাদেশের সরবরাহ ব্যবস্থা একেবারেই ভেঙে পড়ে। বিশেষ করে লকডাউনের সময় এ সরবরাহ ব্যবস্থা নিরবচ্ছিন্ন ছিল না। এর কারণে পণ্যের দামে যে ঊর্ধ্বগতি ছিল তা এখনো অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে, লকডাউনের সময় সাধারণ জনগণের মধ্যে পণ্য মজুদের প্রবণতা শুরু হয়। যার ফলে লকডাউনের প্রথম সপ্তাহে বাজারে পণ্যমূল্য ১৬ শতাংশ বেড়ে যায়। এর পরে তা আরো বেড়ে ২০ শতাংশে উন্নীত হয়।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password