যিনি কবরে খোদাই করা রেসিপি থেকে খাবার বানিয়ে খাচ্ছেন

যিনি কবরে খোদাই করা রেসিপি থেকে খাবার বানিয়ে খাচ্ছেন

গোরস্তানের নাম শুনলেই গা ছমছম করে। কিন্তু অনেকে আবার এই জায়গায়ই খুঁজে পান শান্তি। কারণ, প্রিয়জনেরা যে এখানেই শুয়ে আছেন। এমন একটি জায়গা থেকে রেসিপি খুঁজে বের করে রান্না করে খাওয়ার কথা শুনলে একটু অদ্ভুতই লাগে। তবে এই কাজ করেন রোজি গ্র্যান্ট। করোনার সময় থেকে কাজটা করছেন তিনি। লকডাউনের সময় অনেক কিছুই প্রথমবারের মতো শুরু করেন তিনি।

তালিকায় আছে বেক করা, টিকটক অ্যাকাউন্ট খোলা এবং গোরস্তানে প্রতিদিন হাঁটতে যাওয়া। এই কাজ করতে গিয়েই গোরস্তানে সমাধির ওপর খোদাই করা রেসিপিগুলো তাঁর নজর কাড়ে। তিনি উপলব্ধি করেন খাবার এবং মৃত্যুর মধ্যে যেন একটা বন্ধন আছে। দুঃখ এবং শোকের সময়ে খাবার সান্ত্বনার উৎস হিসেবে কাজ করে। সংরক্ষণাগারবিদ হওয়ার জন্য ওয়াশিংটন ডিসির কংগ্রেসনাল গোরস্তানে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন রোজি গ্র্যান্ট।

এটি ছিল তাঁর কোর্সওয়ার্কের অংশ। মেরিল্যান্ড ইউনিভার্সিটিতে গ্রন্থাগার এবং তথ্যবিজ্ঞানের ওপর স্নাতকোত্তর করছিলেন তিনি। করোনার প্রথমদিকেই শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ শুরু করেন রোজি। কংগ্রেসনাল গোরস্তান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রাচীন সমাধিক্ষেত্র।

সমাধিগুলোর ইতিহাসের ভান্ডার যে কতটা আকর্ষণীয় এবং সমৃদ্ধ, সেটা মহামারি চলাকালীন সময় প্রতিদিন গোরস্তানে যাওয়া–আসা করতে করতে টের পেলেন। বছরের পর বছর ধরে কীভাবে সমাধির নকশা পরিবর্তিত হয়েছে, কীভাবে বিভিন্ন প্রতীক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, সমাধির ওপর বসানো পাথরগুলোতে কী ধরনের তথ্য যোগ-বিয়োগ হচ্ছে, এসব তাঁর কাছে আস্তে আস্তে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। অতীতে শুধু নাম, তারিখ প্রাধান্য পেত; ধীরে ধীরে তাতে যোগ হতে থাকে আরও নানা তথ্য। পাথরের ওপর শখ, ব্যক্তিগত তথ্য এমনকি রেসিপিও উৎকীর্ণ হতে থাকে।

সমাধির ওপর যে রেসিপি খোদাই করা থাকতে পারে, এটি তিনি কখনো কল্পনাও করতে পারেননি। রেসিপি দেখার পরই রোজি গ্র্যান্টের মাথায় আসল, নতুন শেখা এই তথ্যকে একসঙ্গে করে টিকটকে পোস্ট করতে হবে। প্রথম বানাতে চেষ্টা করলেন স্প্রিটজ কুকি। নিউইয়র্কের একটি সমাধিস্তম্ভ থেকে রেসিপিটা পেয়েছিলেন তিনি।

রেসিপিটির উপাদানের তালিকায় ছিল ১ কাপ মার্জারিন, ১টি ডিম, ১ চা-চামচ ভ্যানিলা অ্যাসেন্স। স্প্রিটজ কুকি কী, না জেনেই অনুমানে তাঁকে রান্নাটি করতে হয়েছিল। রেসিপিগুলো মৃত্যুর অন্য একটি বিকল্প দিকও রোজিকে দেখিয়েছে। ওয়াশিংটন পোস্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘রেসিপিগুলো যেন কাউকে স্মরণ এবং তাঁদের জীবন উদ্‌যাপন করার একটি উপায়।’ গোরস্তানের তথ্যগুলো নথিভুক্ত করতে নতুন টিকটক প্রোফাইল ব্যবহার শুরু করেন গ্র্যান্ট।

অ্যাকাউন্টের নাম দিয়েছেন ‘ভুতুড়ে সংরক্ষণাগার (গোস্টলি আর্কাইভ)’। নিজে যে ট্যাফোফাইল (কবরস্থান, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া এবং সমাধি সম্পর্কে আগ্রহী ব্যক্তি), সেটাও কাজ করতে গিয়ে বুঝেছেন। তার দ্বিতীয় রেসিপি ছিল ফাজ রেসিপি। যুক্তরাষ্ট্রের ইউটাহতে মার্থা ক্যাথরিন কে কিরখাম অ্যান্ড্রুজের সমাধির ওপর রেসিপিটি খোদাই করা আছে।

পাশাপাশি ক্রিসমাস কুকিজ, নো-বেক চকলেট ওটমিল কুকিজ, ডেট এবং নাট ব্রেড, নাট রোলস, ইস্ট কেক, পিচ মুচি, স্নিকার ডুডল কুকিজ, ব্লুবেরি পাই এবং চিজ ডিপ বেক করেছেন রোজি গ্র্যান্ট। এ পর্যন্ত নিউইয়র্ক, আইওয়া, আলাস্কা, লুইজিয়ানা, ক্যালিফোর্নিয়া, ইউটাহ, ওয়াশিংটন এবং ইসরায়েলের গোরস্তান থেকে রেসিপি সংগ্রহ করে বানিয়েছেন গ্র্যান্ট। নিউইয়র্ক পোস্ট, গার্ডিয়ান, ওয়াশিংটন পোস্ট রোজিকে নিয়ে প্রতিবেদন করেছে।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password