আল্লাহর জন্য এক নারী সাহাবির আত্মত্যাগ

আল্লাহর জন্য এক নারী সাহাবির আত্মত্যাগ

মানবতার মুক্তির দূত রাসুলে আরাবি (সা.) প্রকাশ্য ইসলামের দাওয়াত শুরু করার সময় থেকে প্রাথমিকভাবে যেসব মহৎ প্রাণগুলো তাঁর সঙ্গ দেওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন নুসাইবা বিনতে কাব আল আনসারিয়্যাহ (রা.) ছিলেন তাঁদের অন্যতম একজন। স্বয়ং রাসুল (সা.) তার জন্য এই বলে দোয়া করেছেন যে তিনি যেন জান্নাতে তাঁর প্রতিবেশী হন। 

তিনি উম্মে উমারাহ নামে অধিক পরিচিত ছিলেন। আব্দুল্লাহ ইবনে কাব এর বোন এবং আব্দুল্লাহ ও হাবিব ইবনে জায়েদ এর মা। তিনি যখন ওহুদ যুদ্ধে অংশ নেন তখন তাঁর বয়স ছিল ৪৩ বছর, ওহুদ যুদ্ধে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হয়েছিলেন, ১৩টি স্থানে আঘাত লেগেছিল। আবার তিনি যখন ইয়ামামার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তখন তাঁর বয়স ছিল প্রায় ৫২ বছর।

নবী বলে স্বীকার না করায় মিথ্যা নবীর দাবিদার মুসায়লামাতুল কাজ্জাব উম্মে উমারাহ (রা.)-এর ছেলে বিখ্যাত বীর সাহাবি হাবিব (রা.)-কে বন্দি করে ও একটি একটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিচ্ছিন্ন করে কষ্ট দিয়ে হত্যা করে। মুসলিম বাহিনী যখন কুখ্যাত মুসায়লামার বিরুদ্ধে অভিযানের ঘোষণা দেয় তখন নুসাইবা (রা.) পণ করেছিলেন, মিথ্যা নবীর দাবিদার মুসায়লামাতুল কাজ্জাবকে নিজ হাতে হত্যা করবেন। ইয়ামামার যুদ্ধে তিনি এক হাতে বর্শা ও অন্য হাতে তারবারি চালাতে চালাতে শত্রু বাহিনীর ব্যূহ ভেদ করে সামনে এগিয়ে যেতে থাকেন। এতে তাঁর দেহের ১১ স্থান নিজা ও তরবারির আঘাতে আহত হয়। শুধু তা-ই নয়, একটি হাত বাহু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এতেও তিনি সিদ্ধান্ত থেকে টলেননি। এভাবে মুসায়লামাতুল কাজ্জাবের সামনে পৌঁছে যান, কিন্তু তিনি আঘাত করার আগেই মুসায়লামাকে তাঁর ছেলে আব্দুল্লাহ হত্যা করে ফেলেন। এতে নুসাইবা (রা.) দারুন উত্ফুল্লচিত্তে তখনই সিজদায় শোকর আদায় করেন।

তিনিই প্রথম নারী, যিনি ইসলামের জন্য ময়দানে যুদ্ধ করেছেন। প্রথমদিকে যুদ্ধরত সাহাবিদের সেবা-শুশ্রূষা করলেও ওহুদের যুদ্ধে যখন পরিস্থিতি পরাজয়ের দিকে চলে যাচ্ছিল এবং মহানবী (সা.)-এর চারপাশে কেউ ছিল না, তখন এই নুসাইবা (রা.)-ই রাসুল (সা.)-কে ঘিরে ধরেন এবং বিপরীত পক্ষের তীরের আঘাত থেকে নবীজিকে রক্ষা করেন। খলিফা ওমর (রা.)-এর খেলাফতকালে একবার গনিমতের মালের মধ্যে কিছু চাদর আসে। তার মধ্যে একটি চাদর ছিল খুবই সুন্দর ও দামি। অনেকে বলেন, এটি খলিফা তনয় আবদুল্লাহ (রা.)-এর স্ত্রীকে দেওয়া হোক। অনেকে খলিফার স্ত্রী কুলসুম বিনতে আলী (রা.)-কে দেওয়ার কথাও বলেন। খলিফা কারো কথায় কান দিলেন না। তিনি বলেন, এ চাদরের সবচেয়ে বেশি হকদার নুসাইবা। কারণ আমি ওহুদের দিন তার সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘আমি যে দিকেই দৃষ্টিপাত করছিলাম, শুধু উম্মে উমারাহকেই লড়তে দেখছিলাম।’ অতঃপর তিনি চাদরটি তার কাছে পাঠিয়ে দেন। (তাবাকাত : ৮/৪১৫; সিয়ারু আলামিন-নুবালা : ২/২৮১)

এই মহীয়সী নারী ১৩ হিজরিতে ইন্তেকাল করেন ও জান্নাতুল বাকিতে চিরনিন্দ্রায় শায়িত আছেন। আল্লাহ তাঁকে জান্নাতের সর্বোচ্চ মাকাম দান করুন।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password