পাঁচ বছর পর পাওয়া গেল বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ চুরির ঘটনায় জড়িতদের পরিচয়

পাঁচ বছর পর পাওয়া গেল বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ চুরির ঘটনায় জড়িতদের পরিচয়

ঘটনাস্থল রাজধানীতে অবস্থিত বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ঘটনার সূত্রপাত প্রিন্টারের সমস্যা থেকে। ২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সকাল পৌনে নয়টার দিকে প্রিন্টারের সমস্যা দেখতে পান ব্যাংকের কর্মকর্তা জুবায়ের বিন হুদা। তবে অন্যান্য দিনের মতো স্বাভাবিক সমস্যায় মনে হয়েছে তার। এর মধ্যেই ব্যাংকের পুরো কম্পিউটার নেটওয়ার্কের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় উত্তর কোরিয়ার হ্যাকাররা।

মিশন ১০০ কোটি ডলার ডাকাতি। নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে বাংলাদেশের রাখা সব অর্থ খালী করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি নির্দেশনা পাঠানো হয়। বন্ধ করে আবার চালুর পর পরই হ্যাকিংয়ের বিষয় আজ করতে পেরে নিউইয়র্ক এর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে ততক্ষণে ৮ কোটি ডলার সরিয়ে ফেলেছে হ্যাকাররা। অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের অর্থ চুরি করেছে হ্যাকাররা।

বিশেষ করে সময় নির্বাচনের বিষয়টি উল্লেখযোগ্য। হ্যাকিং শুরু হয় বাংলাদেশ সময় রাত আটটা থেকে আর এর পরদিনই দুদিনের সাপ্তাহিক ছুটি শুরু। আর অন্যদিকে যে মুহূর্তে বাংলাদেশের ছুটি শেষ ঠিক তখন অর্থাৎ রোববার নিউইয়র্কের সাপ্তাহিক ছুটির দিন। অর্থ পাচারের জন্য স্থান নির্ধারণ করা হয় ফিলিপিনস এর রাজধানী ম্যানিলায়। ঠিক সে সময়ে ওই অঞ্চল সহ এশিয়ার অধিকাংশ দেশ চান্দ্র বর্ষ উদযাপনে মগ্ন।

পরিকল্পনা করেই পাঁচদিনের মিশন নিয়েছিল হ্যাকাররা। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের কম্পিউটার নেটওয়ার্কে এক বছরের বেশি সময় ধরে নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল হ্যাকার দলটি। ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে চাকরি চেয়ে রাসেল আলম নামে এক ব্যক্তি বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের কাছে ইমেইল পাঠান। প্রকৃতপক্ষে রাসেল হ্যাকার গ্রুপের সদস্য। দুর্ধর্ষ ব্যাংক-ডাকাতির পর উত্তর কোরিয়ার মতো দরিদ্র একটি দেশ কিভাবে হ্যাকারদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।

বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১৩০ কোটি ডলার চুরির সঙ্গে জড়িত দলটির নাম লেভেলেস গ্রুপ। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই এক হ্যাকারের নাম ও ছবি প্রকাশ করেছে তার নাম ‘পার্ক জিন হিউক’ উত্তর কোরিয়া থেকে স্নাতক শেষ করে চীনের বন্দরনগরী তালিয়ানে জসন এক্সপো নামের একটি প্রতিষ্ঠানে প্রোগ্রামারের কাজ শুরু করেন। দিনের বেলায় প্রোগ্রামার হলেও রাতে পুরোদস্তুর একজন হ্যাকার।

সেখান থেকেই একটি ইমেইল ও সিভি ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম দিয়ে সে করে তুলে একটি নেটওয়ার্ক। পার্ক হিউক রাতারাতি হ্যাকার হননি সুপরিকল্পিত ভাবে ১২ বছর বয়স থেকে প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে হাজার হাজার হ্যাকারকে। পার্ক জিন হিউক এর পাশাপাশি আরও দুজন উত্তর কোরিয়ার নাগরিক ‘জন জিন হিউক’ এবং ‘কি মিল’ সঙ্গে জড়িত।

মার্কিন আদালতে তারা অভিযুক্ত হয়েছেন। এতে বলা হয় দীর্ঘদিন ধরে উত্তর কোরিয়ার সামরিক গোয়েন্দা শাখার হয়ে কাজ করছেন তারা। সরকারের মদদে বেশ বড় বড় হ্যাকিং এ অংশ নেন তারা। ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালে এই দলটির ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ, তাইওয়ান, মেক্সিকো, মালটা ও আফ্রিকা থেকে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে ১৩০ কোটি ডলার আত্মসাৎ করেন।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password