মরক্কোয় শুধুই লাশের গন্ধ

মরক্কোয় শুধুই লাশের গন্ধ
MostPlay

ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত মরক্কোয় এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন অনেকে। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে উদ্ধার অভিযান। আটকা পড়াদের জীবিত উদ্ধারে প্রাণপণ লড়ছেন জরুরি বিভাগের সদস্যরা। যোগ দিয়েছে সেনাবাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো। তবে, প্রত্যন্ত এলাকায় পৌঁছায়নি উদ্ধারকারী দল।

উত্তর আফ্রিকার দেশ মরক্কোয় ভয়াবহ ভূমিকম্পে গতকাল শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নিহত হাজার ছাড়িয়েছে। আহতের সংখ্যাও হাজার ছাড়িয়েছে। স্থানীয় সময় গত শুক্রবার রাত ১১টা ১১ মিনিটে পাহাড়ি অঞ্চল আল-হাউসে ৬.৮ মাত্রার এ ভূমিকম্প আঘাত হানে। ভূমিকম্পে ঘরবাড়িসহ বহু ভবন ধসে পড়ে। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে অনেকে।

বলা হচ্ছে, এটি মরক্কোয় বেশ কয়েক দশকের মধ্যে আঘাত হানা সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প। গতকাল দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রথমে ৮২০ জন নিহত হওয়ার কথা জানায়। নিহতদের এক-তৃতীয়াংশই আল-হাউস এলাকার। অন্যরা তারোদান্ত, ওয়ারজাজাতে, চিচাওয়া, আজিলাল, ইউসুফিয়া, ক্যাসাব্লাংকা, মাগাদির ও মারাকেশ অঞ্চলের। আহতদের মধ্যে ২০৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

পরে কাতারভিত্তিক আলজাজিরা জানায়, নিহতের সংখ্যা কমপক্ষে এক হাজার ৩৭ জন (বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ৩০ মিনিট) এবং আহত এক হাজার ২০০ জনের মতো। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। ভূমিকম্পের পরপরই ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে উদ্ধার অভিযান শুরু করা হয়। শেষ খবর অনুযায়ী উদ্ধার অভিযান চলছিল।

মরক্কোর সহায়তায় এগিয়ে আসার কথা জানিয়েছে যুক্তরাজ্য। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা জানিয়েছে, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল আল-হাউস দেশটির অন্যতম প্রধান পর্যটন এলাকা মারাকেশ থেকে ৭২ কিলোমিটার (৪৫ মাইল) দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। ভূপৃষ্ঠের ১৮.৫ কিলোমিটার গভীরে এটি আঘাত হানে।

কম্পন অনুভূত হয় মরক্কোর উপকূলীয় শহর ও রাজধানী রাবাত, ক্যাসাব্লাংকা ও ইসাওইরা অঞ্চলেও। মারাকেশ থেকে টেলিফোনে আবদেলহাক এল আমরানি (৩৩) নামের এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘প্রথমে ভয়ংকর একটি কম্পন অনুভূত হয়। পরে আমি বুঝতে পারি যে এটি ভূমিকম্প। দেখতে পাই ভবনগুলো দুলছে।’

ভূমিকম্প আঘাত হানার পর স্থানীয়রা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। অনেকেই তখন ঘুমিয়ে ছিল। তাড়াহুড়া করে ঘর থেকে বাইরে খোলা জায়গায় বেরিয়ে আসে তারা। পরঘাতের আশঙ্কায় অনেকেই রাস্তা বা মাঠে গোটা রাত কাটায়। মরক্কোয় স্মরণকালের মধ্যে এই মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানেনি।

এক বিশেষজ্ঞ এটিকে এ অঞ্চলে ১২০ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে আঘাত হানা সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প বলে উল্লেখ করেন। ফায়সাল বাদুর নামের এক প্রকৌশলী জানান, ভূমিকম্পের সময় তিনি তাঁর ঘরেই ছিলেন। তিনি তিনবার কম্পন অনুভব করেন। স্থানীয় বাসিন্দা হুদা ওতাসাফ এএফপিকে বলেন, ভূমিকম্পে তাঁর পরিবারের ১০ সদস্য নিহত হয়েছে।

মাত্র দিন দুয়েক আগেই তাদের সঙ্গে দেখা হয়েছিল উল্লেখ করে ওতাসাফ বলেন, এটা নিদারুণ ব্যাপার। উল্লেখ্য, ২০০৪ সালে মরক্কোয় এক ভূমিকম্পে ৬২৮ জন নিহত ও ৯২৬ জন আহত হয়। ১৯৬০ সালে আগাদির অঞ্চলে আঘাত হানা ৬.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে ১২ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল। ১৯৮০ সালে মরক্কোর প্রতিবেশী আলজেরিয়ার এল আসনামে ৭.৩ মাত্রার ভূমিকম্পে আড়াই হাজার মানুষ নিহত ও অন্তত তিন লাখ মানুষ গৃহহারা হয়েছিল।

সূত্র : এএফপি, আলজাজিরা।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password