কানেকটিকাটে শিশুর খাবার ফেলে দেওয়ায় বাংলাদেশির বিরুদ্ধে মামলা

কানেকটিকাটে শিশুর খাবার ফেলে দেওয়ায় বাংলাদেশির বিরুদ্ধে মামলা

নিউ ইয়র্ক: যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যে রেস্তোরাঁয় বাংলাদেশি মা ও শিশুর অর্ডারকৃত খাবার সরবরাহে বাধা ও খাবার ফেলে দিয়েছে সাবেক প্রেমিক ও তার স্ত্রী। এ নিয়ে পুলিশে অভিযোগ করেছেন প্রবাসী এক অসহায় নারী। স্থানীয় সময় বুধবার (১ ডিসেম্বর) রাতে মেরিডেন শহরের রুটি বটি রেস্তোরাঁয় এ ঘটনাটি ঘটে। ঘটনার সাথে সাথেই পুলিশে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন এবং তদন্তে ঘটনার সত্যতা খুঁজে পায়।

জানা যায়, কানেকটিকাট প্রবাসী বাংলাদেশি সার্টিফাইড পাবলিক একাউন্টেন্ট শ্রাবনী সিং গত ১ ডিসেম্বর বুধবার মেরিডেন শহরের রুটি বটি রেস্তোরাঁয় শিশু সন্তান ও তার নিজের জন্য রাতের খাবারের অর্ডার দেন। পরে তিনি সেই খাবার আনার জন্য রেস্তোরাঁয় গেলে তার সাবেক প্রেমিক কানেকটিকাটের বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশি আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব কানেকটিকাট (বাক)-এর নব নির্বাচিত সভাপতি নুরুল আলম ওরফে নুরু ও তার স্ত্রীকে দেখতে পেয়ে ভেতরে প্রবেশ না করে ফিরে এসে পার্কিং লটে গাড়িতে অপেক্ষা করেন।

রেস্তোরাঁয় ফোন করে খাবারগুলো পার্কিং লটে তার গাড়িতে নিয়ে আসতে বলেন। এমতাবস্থায় শ্রাবনী সিংকে তারা দেখতে পেয়ে ভীষনভাবে উত্তেজিত হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে নুরুল আলম ওরফে নুরুর স্ত্রী সেলিনা আকতার তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে শ্রাবনীকে অকথ্যা ভাষায় গালিগালজ করতে থাকেন। তারা দু'জনে মিলে রেস্তোরাঁর কাউন্টার থেকে তাদের অর্ডার দেওয়া খাবারগুলো নিয়ে একটি প্যাকেট মেঝেতে ফেলে দেন।

তাকে কোন খাবার সরবরাহ করতে দেননি। এ সময় তারা চিৎকার করে 'নো ফুড ফর হার, নো ফুড ফর হার' বলতে থাকেন। ফলে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে তার পাঁচ বছরের ছেলে। ভয় পেয়ে শ্রাবনী প্রথমে জরুরি ভিত্তিতে ৯১১ ফোন করে পুলিশ ডাকেন। এরপর বেশ কয়েকজন বাংলাদেশিকেও ফোন করে বিষয়টি তাৎক্ষনিকভাবে তাদেরকে জানান এবং সকলের সাহায্য কামনা করেন।

ওইদিন তার ডাকে সাড়া দিয়ে অসহায় শ্রাবনীর পাশে কেউ আসেনি। নিরুপায় হয়ে পরদিন বৃহস্পতিবার (২ ডিসেম্বর) শ্রাবনী সিং পুলিশের রিপোর্ট সংগ্রহ করে অপব্যবহার/গালাগালি থেকে মুক্তির জন্য নিষেধাজ্ঞার আদেশ চেয়ে মেরিডেন সুপরিয়র কোর্টে আবেদন করেন। কোন আইনজীবির সহায়তা ছাড়া একাই আদালতে গিয়ে তার স্বহস্তে লেখা একটি আবেদন আদালতে জমা দেন।

বিজ্ঞ আদলত তা আমলে নিয়ে আগামী ১০ ডিসেম্বর শুনানির দিন ধার্য্য করেন। তারপরও শ্রাবনী অস্বস্তিতে ভুগছিলেন, তাই পরদিন তিনি আবারো আদালতের দারস্থ হন। আদালতে গিয়ে তিনি বিশ্রীভাষায় গালাগালকারী নুরুল আলম ওরফে নুরুর স্ত্রীর বিরুদ্ধে আরও একটি অপব্যবহার/গালাগালি থেকে মুক্তির জন্য নিষেধাজ্ঞার আদেশ চেয়ে আবেদন করেন। বিজ্ঞ আদালত তা তাৎক্ষনিকভাবেই মঞ্জুর করেছেন বলে শ্রাবনী সিং এ প্রতিনিধিকে জানান।

অপর দিকে, এ ঘটনা সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে ওইদিনেই ক্ষুদেবার্তার মাধ্যমে নুরুল আলম ওরফে নুরুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন উত্তর দেননি। উল্লেখ্য, বাংলাদেশি আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব কানেকটিকাট (বাক)-এর নাম শুনে ২০১৮ সালে চাকুরির সন্ধানে দুই সন্তানকে নিয়ে প্রথম বারের মতো কানেকটিকাট আসেন শ্রাবনী। সাবেক সভাপতি শ্রাবনীকে বাক-এর সহ-সভাপতি নুরুল আলম ওরফে নুরু’র সাথে পরিচয় করিয়ে দেন।

শ্রাবনী ও নুরুল আলম দু’জনেরই জন্ম বাংলাদেশের চট্টগ্রামে। শ্রাবনী তার পরিচয় এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত করার সুবিদার্থে সাবেক সভাপতি ও নুরুর কাছে নিজের পাসপোর্ট ও রেজিউমি হস্তান্তর করেন। নুরুল আলম তৎক্ষণাৎ শ্রাবনীকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেন এবং একই দিনে শ্রাবনীকে মিডেলটাউন ফ্যামিলি কোর্টে বাচ্চার কাস্টডি ফাইল করার ব্যাপারে সব রকমের ব্যবস্থা করে দেন।

নুরুল আলম তার মিডলটাউনের বাসায় শ্রাবনীর থাকার ব্যবস্থা করেন। গত ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর চাকুরির জন্য জব লেটার ও পর্বর্তীতে বিয়ের আশ্বাস দেন শ্রাবনীকে। ধীরে ধীরে শ্রাবনীর সাথে পরকীয়া প্রেমে লিপ্ত হন। বিয়ের লোভ দেখিয়ে দীর্ঘদিন তার সাথে চুটিয়ে প্রেম করেন। একপর্যায়ে শ্রাবনীকে দিয়ে তার কানাডিয়ান স্বামীকে ডিভোর্স করারও বন্দোবস্ত করেন তিনি।

ঘটনা জানাজানি হলে ছোট শিশুসহ ভাড়া বাড়ি থেকে শ্রাবনীকে এক কাপড়ে ঘর থেকে বের করে দেন। ছোট শিশু সন্তান নিয়ে ভীষন অসহায় হয়ে কানেকটিকাটের বিভিন্ন মানুষের কাছে সাহায্য চেয়েছেন শ্রাবনী। কেউ তাকে তেমন কোন সাহায্য না করলেও নিজেই স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন। একা ছোট বাচ্ছাকে দেখাশুনার করে একটি চাকুরি করছেন। কারও সাথে তেমন মিশতেও চান না তিনি। কিন্তু গত ১ ডিসেম্বর বুধবার মেরিডেন শহরের রুটি বটি রেস্তোরাঁয় শিশু সন্তান ও তার নিজের জন্য রাতের খাবার সমাজের নেতা খ্যাত অসভ্য মানুষেরা কেড়ে ফেলে দেওয়ার পর থেকেই মানিষিক যন্ত্রণায় ভুগছেন শ্রাবনী।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password