সোলাইমানি হত্যা, বিভক্ত মার্কিন আইনপ্রণেতারা

সোলাইমানি হত্যা, বিভক্ত মার্কিন আইনপ্রণেতারা

ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের কুদস ফোর্সের প্রধান কাশেম সোলাইমানিকে হত্যার ঘটনায় মার্কিন আইনপ্রণেতারা সুস্পষ্টভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক পার্টির আইনপ্রণেতারা নিজ নিজ দলীয় অবস্থান থেকে এ হত্যাকাণ্ডের পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। একই সঙ্গে আবারও মার্কিন প্রেসিডেন্টের যুদ্ধে জড়ানোর ক্ষমতা কমানোর প্রসঙ্গটিও সামনে এসেছে।

সোলাইমানি হত্যার খবর সংবলিত এক বিবৃতিতে পেন্টাগন সুস্পষ্টভাবে বলেছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে ইরানের ভবিষ্যৎ হামলার ঝুঁকি রোধেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

এই বিবৃতিই ইস্যুটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়ানোর জন্য যথেষ্ট। কারণ এটি সুস্পষ্টভাবে সাবেক বারাক ওবামা প্রশাসনের মধ্যপ্রাচ্য নীতি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসা। এই প্রেক্ষাপটে বিষয়টিকে দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখছেন ডেমোক্র্যাট নেতারা।

এ বিষয়ে সাবেক বারাক ওবামা প্রশাসনের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের ইরাক-বিষয়ক পরিচালক ও নিউজার্সি থেকে প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্র্যাট সদস্য অ্যান্ডি কিম নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, ‘এই পরিস্থিতির আশঙ্কা আমি বহু বছর ধরে করছিলাম, যা নিশ্চিতভাবেই সংঘাত ও অস্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যাবে, যা থেকে আমরা সব সময় দূরে থাকতে চেয়েছি।’

মার্কিন বাহিনীর এমন অভিযান নিয়ে স্পষ্ট ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসিও। এ সম্পর্কিত এক বিবৃতিতে পেলোসি বলেন, ‘মার্কিন কংগ্রেসের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই পদক্ষেপটি নেওয়া হয়েছে। নিজেদের জনগণ ও জাতীয় স্বার্থই মার্কিন নেতাদের সবচেয়ে অগ্রাধিকারের বিষয়। আমাদের সেনা, কূটনীতিকসহ অন্যদের জীবন ঝুঁকিতে পড়তে পারে—এমন কোনো উসকানিমূলক ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ পদক্ষেপ আমরা নিতে পারি না। আজকের হামলা ভয়াবহ সংঘাতের উসকানি হিসেবে কাজ করার ঝুঁকি রয়েছে।’

এই যখন ডেমোক্র্যাট শীর্ষ নেতৃত্বের অবস্থান তখন রিপাবলিকান নেতৃবৃন্দ এ ঘটনার জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পিঠ চাপড়ে দিচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন সেনাবাহিনীর সদস্যদের ন্যায্যতা প্রাপ্তি নিশ্চিত করেছেন। মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের কুদস ফোর্সের হামলায় বহু মার্কিন সেনা নিহত হয়েছেন, যার নেতা ছিলেন সোলাইমানি।

এ সম্পর্কিত এক প্রতিক্রিয়ায় রিপাবলিকান সিনেটর ও ফরেন রিলেশনস কমিটির চেয়ারম্যান জিম রিশ বলেন, ‘তাঁর (সোলাইমানির) মৃত্যু ইরানের প্রভাব থেকে বেরিয়ে স্বাধীনভাবে নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের সুযোগ নিয়ে এসেছে ইরাকের সামনে। ইরান সরকারকে আমি আগেও সতর্ক করেছিলাম যে, তাদের হামলার বিপরীতে আমাদের শান্ত থাকাটাকে তারা যেন আমাদের দুর্বলতা ভেবে না বসে।’

সিনেটর মার্কো রুবিও টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে রীতিমতো প্রশংসায় ভাসিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘চূড়ান্ত উত্তেজনাকর মুহূর্তেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন, তা ছিল প্রশংসনীয়।’

রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে এই ইস্যুতে স্পষ্টত বিভক্তি রয়েছে। এক পক্ষ ঘটনাটি নিয়েই এখনো ব্যস্ত। অন্য পক্ষ ঘটনার ফলে সৃষ্ট ঝুঁকি নিয়ে বেশি চিন্তিত। দ্বিতীয় পক্ষটি একই সঙ্গে এমন বড় একটি পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে কংগ্রেসকে এড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়েও উদ্বিগ্ন। এ ক্ষেত্রে পরবর্তী ঝুঁকি নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের প্রস্তুতি নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন ডেমোক্র্যাটরা। এ বিষয়ে ম্যাসাচুসেটসের ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি সেথ মোলটন বলেন, ‘জেনারেল সোলাইমানি যুক্তরাষ্ট্রের শত্রু। তাঁর হাতে আমেরিকানদের রক্ত লেগে আছে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে আমাদের সামনে ইরাক ইস্যুতে সবচেয়ে বড় যে প্রশ্নটি সামনে রয়েছে, তা হলো সন্ত্রাসবাদের জন্ম না দিয়ে কীভাবে সন্ত্রাস দমন করা যায়। আজ এই প্রশ্নটিই আবার সামনে এল, যখন আমরা ইরানের প্রতিক্রিয়ার জন্য অপেক্ষা করছি। ডোনাল্ড ট্রাম্প যে উত্তেজনার তৈরি করলেন, তা এমনকি আঞ্চলিক যুদ্ধেরও জন্ম দিতে পারে। অথচ এ বিষয়ে এখনো প্রশাসনের কোনো সুনির্দিষ্ট কৌশল নেই।’

এ ক্ষেত্রে কোনো রাখঢাকই রাখেননি মেক্সিকোর ডেমোক্র্যাট সিনেটর টন উডাল। এক বিবৃতিতে তিনি প্রেসিডেন্টকে ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রকে এক ‘অবৈধ যুদ্ধে’ জড়ানোর অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘(ইরানের সঙ্গে) শত্রুতার এমন বেপরোয়া বৃদ্ধি যুদ্ধ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কংগ্রেসের কর্তৃত্ব ও ইরাকের সঙ্গে হওয়া আমাদের যাবতীয় চুক্তির লঙ্ঘন, যা দেশটিতে থাকা মার্কিন সেনা ও নাগরিকদের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে। সম্ভবত এর মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে আমরা আরেকটি ভয়াবহ যুদ্ধে জড়াতে যাচ্ছি, যার জন্য মার্কিন জনগণের কোনো সায় নেই।’

প্রসঙ্গত, গত বছর টম উডালই ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রকে যুদ্ধে জড়িয়ে দেওয়ার মতো কোনো পদক্ষেপ যাতে ট্রাম্প নিতে না পারেন, সে জন্য একটি আইন পাসের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু গত জুনে বিলটি সিনেটে আটকে যায়। অবশ্য পাস হলে তা কার্যকরের জন্য ট্রাম্পের দপ্তরেই যেতে হতো। এর বাইরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ডিফেন্স অথোরাইজেশন অ্যাক্ট (এনডিএএ) সংশোধনেরও প্রস্তাব আনেন। কিন্তু সেই চেষ্টাও সফল হয়নি।

 

মন্তব্যসমূহ (১)


Lost Password